বিআরটি প্রকল্পে দুর্ঘটনা: কারণ চিহ্নিত করা জরুরি

Passenger Voice    |    ১১:৪১ এএম, ২০২১-০৩-১৭


বিআরটি প্রকল্পে দুর্ঘটনা: কারণ চিহ্নিত করা জরুরি

রাজধানীতে নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে মাত্র আট ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার গভীর রাতে। প্রথমে আব্দুল্লাহপুর এলাকায় প্রকল্পের নতুন ঢালাই দেওয়া পিয়ার ক্যাপ ধসে পড়েছে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে রোববার সকাল ১০টায়।

এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনের সড়ক এলাকায় প্রকল্পের লঞ্চিং গার্ডার হঠাৎ কাত হয়ে পড়ে। এতে তিন চীনা নাগরিকসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। সড়কে ব্যস্ততা বেশি থাকলে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত, স্বস্তির বিষয় তেমনটি ঘটেনি। তবে এ দুর্ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে নির্মাণকাজ শেষ না হতেই একই প্রকল্পে দুটি দুর্ঘটনা ঘটল; স্বভাবতই এতে প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ দুর্ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। প্রকল্পের পরিচালক (এলিভেটেড অংশ) মো. লিয়াকত আলী বলেছেন, প্রতিটি পিয়ার তৈরির সময় মাটি থেকে একধরনের সাপোর্ট দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের কোনো এক সময় কোনো ট্রাক বা অন্য যানবাহন সেই সাপোর্টে ধাক্কা দিয়েছে।

এ কারণে এ সাপোর্ট সরে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রশ্ন, এভাবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা যেখানে রয়েছে, সেখানে নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন রাখা হলো না কেন? আবার প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ বলেছেন, যন্ত্রের ত্রুটির কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে, এটা মূল পিলারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অন্যদিকে নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান বলেছেন, লঞ্চিং গার্ডারটি শিফটিং করার সময় হঠাৎ সাপোর্ট সরে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্টরা দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে অনুমাননির্ভর কথা বলেছেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমেই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যেতে পারে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আশা করব, নির্ধারিত সময়েই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ পাবে।

দেশে এ ধরনের নির্মাণাধীন প্রকল্পে গার্ডার ধসের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১২ সালে চট্টগ্রাম নগরীর নির্মাণাধীন বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসে ১৭ জন প্রাণ হারান। এর আগে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে নির্মাণাধীন ফুট ওভারব্রিজের বিম ধসে প্রাণ হারান অনেকে। আমরা মনে করি, এসব স্থাপনা নির্মাণকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা যেমন প্রয়োজন, তেমনি এ ধরনের বড় বড় প্রকল্পের কাজ শতভাগ মানসম্পন্ন হওয়াও জরুরি।

বিআরটি প্রকল্পে দুর্ঘটনার কোনো কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, সেখানে যারা কাজ করছিলেন, তাদের মাথায় হেলমেট ও অ্যাপ্রোন ছাড়া কোনো নিরাপত্তা উপকরণ চোখে পড়েনি। ফলে গার্ডারটি কাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে উপর থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান।

আমরা মনে করি, বিআরটি প্রকল্পে দুর্ঘটনার জন্য কারও কোনো গাফিলতি বা খামখেয়ালি থেকে থাকলে, তা চিহ্নিত করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ভবিষ্যতে এ প্রকল্পসহ এ ধরনের কোনো প্রকল্পে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে।